কিছু না
- সরকার স্বপন - রাতের রুমালে তোমার ঘ্রাণ ১৮-০৫-২০২৪

কী আকুল হয়েই না জানতে চেয়েছিলাম, তোমার চোখে যে সূর্যোদয়ের
আভা ঝলমল করছে তা কোথা থেকে এলো, কে দিলো এনে তোমার
মনে চঞ্চল ঝরনাধারা।
তুমি জানালে, ময়ূরী জলকেলি করে না,
নামে না সাগরের জলে।
তুমি তো ময়ূরী নও মানবী আটপৌঢ়ে এক নারী! তবে কিসের এত দ্বিধা,
কেন তুমি নিজেকে জড়িয়ে আছ নৈঃশব্দ্যের ধাঁধাঁয়, কোন সে কারণ?
তুমি বললে, ‘কিছু না!’
পারিজাতহীন কঠিন পাথরচাপা বুকে, সূর্যের আদেশে গভীর রাতের
সত্যকে জানতে নির্বিকার তোমার ইন্দ্রজালে করলাম পদার্পন। স্বর্ণালী
গাংচিলের দেশে তখন তুমি শ্বেতপাথরের ঘাটে আমার জন্যই ছিলে
অপেক্ষমান। তুমি যেন আগেই জানতে আমি আসবই। চকচকে সোনা
ঝরা রোদে বেলি ফুল জড়ানো অদ্ভুত মোহনীয়তায় আমাকে জানালে
বিন¤্র অভিবাদন।
তৃষ্ণার্ত মৃত্যুর মিথ্যে প্রবোধ চাই না।
চাই না নির্মম ক্লেদ পরাজয়ের।
তাই জিজ্ঞেস করলাম সরাসরি, এবার বলো ‘কিছু না’ এর অর্থ কি সত্যি
‘কিছুই না?’
কুয়াশার ক্যানভাসে কুয়াশা ছড়ানো স্নিগ্ধ হাসি হেসে বললে, ‘চলো,
এখুনি।’ নিয়ে চললে দিগন্ত বিস্তৃত খোলা সবুজ মাঠের শেষপ্রান্তে।
আমাকে বসতে বললে তোমার পাশেই, পাশাপাশি। অন্যরকম এক
সকাল, মোহন বাতাস আর বর্ণিল পেখম মেলা ময়ূরীর দলকে সাক্ষী করে
সলাজ আবিরে নিজেকে জড়িয়ে আমার হাত দুটি নিলে তোমার হাতে।
ভাষাহীন তরুর মতো নীরব থাকলে বেশ কিছুক্ষণ। ততক্ষণে তোমার
মৃত্তিকার শরীর জুড়ে ছড়াতে শুরু করেছে এক টুকরো শ্যামলিমা, চোখে
মুখে জাদুকরী সুন্দরী আকাক্সক্ষা। আমি কিছু একটা বলতে চাইলে আদর
জড়ানো ধমকের সুরে বললে, ‘এখন চুপ, কথা কম।’
কিছু বলবার আগেই উষ্ণ অমৃতধর হেমলক ঢেলে দিলো আমার অধরে।
আমাকে দিলে অবশ ছোবল, আমি আদ্যপ্রান্ত নিথর দিঘির মতো শান্ত
স্থির হয়ে গেলাম। ডুবতে ডুবতে ভেসে ওঠা খড়-কুটোর মতো মৃদু মায়াবী
কণ্ঠে প্রশ্ন ছুড়ে দিলে, ‘পেয়েছ কি জবাব তোমার?’
বললে আবার নিজেই, ‘খুলেছি আগল, মেলে দিলাম ডানা। ভালোবেসে
সব হয়। কিছু না মানে, হৃদয় গহীনে অগ্নিবৃষ্টি হয়। আত্মহননে সোনালি
মেঘের কান্নায় প্রাণের সঞ্চার হয় আর চিত্তহরণের শেষে স্বস্তির নিশ্বাস
বয়ে যায় বুকের বুননে।
‘কিছু না’ মানে, না পাওয়ার সন্তাপ না করে, স্বেচ্ছার নির্বাসন ভেঙেচুরে
সাড়া দেয়া অজানা ভুবনের ডাক।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।